NewsCaff: আমরা অনেক সময় অনেক জিনিস দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সেটা নিয়ে ভাবি না বা সেই কারণটাও আর জানা হয়ে ওঠে না। এরকমই একটা বিরিয়ানির হাঁড়িতে কেন লাল কাপড় জড়ানো থাকে? সেই নিয়েই আজকের আলোচনা। তবে নির্দিষ্ট করে কিছু তথ্য জানা না গেলেও চলতি কথায় মুখে মুখে যে কারণ পাওয়া গিয়েছে সেইগুলোই তুলে ধরা হল। যদিও News caff এই কারণগুলির সত্যতা যাচাই করেনি। এবার দেখে নেওয়া যাক সেই কারণগুলি-
নবাবী অর্ভ্যর্থনা দিতে- তখনকার দিনে নবাব এলে তাঁর অভ্যর্থনা জানাতে নবাবী খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হত। আর লাল কাপড়ে ঢেকে বিরিয়ানি এনে বোঝানো হত বিরিয়ানি হল নবাবী অর্ভ্যর্থনার অংশ। তবে লাল রংকে সাধারণত ধরা হয় সৌভাগ্য, উষ্ণতার, আনন্দ-উৎসব ও ভালবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে। হৃদয়ের রং কী? শুধু তাই নয়, উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রকাশের ক্ষেত্রেও হৃদয়ের লাল রং ব্যবহার হয়। তেমনই লাল রংয়ের ব্যবহার একেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন। কোনও দেশে লাল শৌর্য, আক্রমণ, বিপদ অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন, যুদ্ধে লাল নিশানা সৈন্যদের নির্দেশনা দান করত শত্রুর মোকাবিলায়। আবার দেখুন ট্রেনের বা রাস্তার সিগনাল। শুধু কি তাই! মাঠে ফুটবল রেফারীও কিন্তু প্রথমে সতর্কতা হিসাবে হলুদ পরে বিপদজনক আচরণের জন্য লাল কার্ড ব্যবহার করেন।
ভোজনের রেড কার্পেট- রেড কার্পেট শব্দটা বহুদিনের। সেই রাজা রাজরাদের যুগ থেকে আজকের অস্কার। সবেতেই রেড কার্পেট দিয়ে অতিথিদের অর্ভর্থনা জানানোটা একটা রীতি। আর ভোজন রসিকদের কাছে বিরিয়ানির যে বেশি রেড কার্পেট আর হয় নাকি! বিরিয়ানি ভারতে পা রাখে মুঘল আমলে। খাদ্য পরিবেশনে এই প্রথা ও রঙের ব্যবহার শহর লখনউয়ের নবাবরাও অনুসরণ করতেন। সমাজ জীবনে তাই অভিজাত্য, বনেদি, উষ্ণতা প্রকাশে লাল বা লাল কাপড়ের ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
বাকিদের থেকে আলাদা বোঝাতে- রঙই পারে একটার সঙ্গে আরেকটা ফারাক বোঝাতে। যেমন শোকের রঙ হল কালো, ত্যাগের রঙ হল গেরুয়া। শান্তির রঙ সাদা। তেমন লাল হল আভিজ্যতের প্রতীক। বিরিয়ানির ডেকচি লাল-কাপড়ে ঢেকে বার্তা দেওয়া হয় হেঁসেলের সব খাবার থেকে এর ব্যাপারই আলাদা। গোড়ার দিকের মুঘল শাসকরা ছিলেন পারস্য সংস্কৃতি প্রভাবিত। তারা তাদের জীবনে এই ধারা অনুকরণ করতেন। সম্রাট হুমায়ুন হলেন এর পথপ্রদর্শক। কারণ তিনি যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট সেই লালগালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনাই দিয়েছিলেন।
সাধারণের থেকে দূরে রাখতে- নবাবের হেঁসেলে একসঙ্গে অনেক খাবার থাকত। মন্ত্রী-সান্ত্রী সবার। এদিকে হেঁসেলে অনেকের আনাগোণা। তাই কেউ যেন ওই বিরিয়ানির হাড়িতে হাত না দেয়, তাই সেখানে লাল সঙ্কেত দিয়ে দেওয়া। যাতে বুঝিয়ে দেওয়া সাধারণদের জন্যছ এটা নয়। খাদ্য পরিবেশনে দরবারি রীতিগুলোতে বিশেষত্ব, রুপোলি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে নিয়ে আসা হতো। যা মুঘলরাও তাঁদেরর দরবারে চালু করেন। শুধু তাই নয় সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য ছিল লাল পাগড়ির ব্যবস্থা।
গুরুপাক, হজমের পক্ষে কঠিন- তখনকার দিনের বিরিয়ানি আরও অনেক গুরুপাক হত। মানুষের হজমের স্বার্থে তাতে এখন মশালের সংখ্যা অনেক কমানো হয়েছে। সে যুগে যে কেউ বিরিয়ানি সহ্য করতে পারত না। খালি পেটে বিরিয়ানি খেলে বমি হওয়া অবধারিত হত। অনেকবার নাকি এমন হয়েছে হেঁসেলের গরীব কর্মচারী খালি পেটে ভুল বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ত, তাই লাল কাপড় জড়িয়ে বোঝানো হত এটা গুরুপাক, হজমের পক্ষে কঠিন। মানুষের ভাষার মতো রংয়েরও কিন্তু ভাষা আছে। আপনার চিন্তায় কিন্তু রং প্রভাব রাখে। তাই নয় কি? তেমনি পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই রংয়ের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার রয়েছে। পতাকাগুলো দেখুন, বেশির ভাগ ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর পতাকার রঙ সবুজ ও সাদা। কেন? কারণ সবুজকে শান্তি আর সাদাকে স্বচ্ছন্দতা ও শুদ্ধতার প্রতীক বলে মানা হয়।