News Caff: দেবাশীষ ঘোষ – মার্কিন প্রবাসী অভিজিৎ উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী ও যুক্তিবাদী লোক ছিলেন। তাঁর লেখা ধর্মান্ধদের অন্ধবিশ্বাসের দুর্গ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তাঁর লেখা অসংখ্য তরুণ-তরুণী কে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিলো। তিনি কোন নতুন কথা বলেন নি, তবে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের উপযুক্ত ভাষায় তিনি বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গীকে মানুষের সামনে তুলে ধরছিলেন। তাঁর আচরনে বাংলাদেশের উগ্র মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলো আর তাদের ইন্ধন যোগাচ্ছিল তথাকথিত মর্ডারেট বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। তাই অভিজিৎ মারা যাওয়ায় চাপাতি ওয়ালারা যেমন দায়ী, মর্ডারেট বুদ্ধিজীবীরাও ঠিক তেমনই দায়ী। চাপাতিওয়ালারা প্রত্যক্ষভাবে হত্যা করে ও বুদ্ধিজীবীরা ইনিয়ে বিনিয়ে সেইকাজে বৈধতা দেয়। এমন বিষাক্ত পদ্ধতিতে যে শয়তানির নেক্সাস গড়ে ওঠে তাতে যুগে যুগে অভিজিৎ’রা বলিপ্রদত্ত হন।
অভিজিতের মৃত্যুতে যারা শোকগ্রস্থ হয়েছিল, তাদের এক বড় অংশ দাভোলকর বা গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুতে আনন্দে উদ্বাহু নৃত্য করেছেন। আবার যারা দাভোলকরের মৃত্যুতে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন, তাদের এক বড় অংশ অভিজিৎ মারা গেলে আনন্দিত হয়েছেন। এই লোকগুলো সকলেই চূড়ান্ত ভন্ড ও পোটেনশিয়াল হত্যাকারী। এরাই সময় ও সুযোগ পেলে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীতে নাম লেখাবে। এই লোকগুলো একধর্মের ধর্মান্ধতার বিপরীতে ভিন্নধর্মের অন্ধ বিশ্বাসকে লড়িয়ে দিতে চায়। তাই প্রকৃত নাস্তিক যুক্তিবাদী মানুষেরা কখনই এদের কাছে গ্রহণীয় হতে পারে না। বরং এদের হাতে ভবিষ্যতের অভিজিৎরা নিগৃহীত বা প্রয়োজনে নিহত হতে পারেন।
অভিজিৎ নাস্তিকতাকে তাঁর অন্তর দিয়ে লালন করতেন। তিনি বিদেশে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং নিজের যোগ্যতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সসন্মানে কাজ করেছেন। তাঁর মত যোগ্যতাসম্পন্ন লোক সঠিক অর্থেই বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের চর্চায় মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। এখন দেখি অনেকেই নাস্তিক সেজে ইউরোপ আমেরিকায় অ্যাসাইলাম নেওয়ার ধান্ধায় আছে। এঁরা নিজেদের যোগ্যতায় যশোর বা আরামবাগের বাইরে যেতে পারতেন না, কিন্তু নাস্তিকের লেবাস পরে দুই চারটে মিছিলে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে সহজে পাশ্চাত্যে বসবাস করার টিকিট হাতিয়ে নিচ্ছেন। অভিজিৎ এই শ্রেণীর নাস্তিকদের সমগোত্রীয় ছিলেন না, বরং এদের অনেকের কাছেই চক্ষুশূল ছিলেন। আগামী প্রজন্মের সৎ চিন্তাশীল নাস্তিকদের কাছে তাই অভিজিৎ এক আলোকের শিখা, যা বহুযুগ ধরে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
পরিশেষে বলি, অনেকেই আজ অভিজিতের হত্যাকান্ডের বিচার চাইছেন, তাঁর খুনীদের শাস্তি চাইছেন। কিন্তু বাস্তবে তা কখনই সম্ভব নয়। কারন আজও সমাজে অভিজিতের অনুগামীরা সংখ্যালঘু, আর কে না জানে গণতন্ত্রে মস্তিষ্কের চেয়ে মাথার দাম বেশী। তবে আশার কথা, আজকের ডিজিটাল যুগে চাইলেও অভিজিৎ দের মেরে ফেলা যায় না। তাঁর নশ্বর দেহের বিলুপ্তি ঘটলেও তাঁর লেখা, আদর্শ ও ক্ষুরধার যুক্তিবাদ পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে। যেসব লক্ষ লক্ষ কিশোর-কিশোরী যুক্তিবাদী বিজ্ঞানে আকৃষ্ট হচ্ছেন, তারা সকলেই এক একজন নতুন অভিজিৎ। আর এখানেই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের পরাজয়। এক অভিজিতের মৃত্যু আগামীতে সহস্র অভিজিতের আগমনের পথ প্রস্তুত করেছে। অভিজিৎ আজ অমৃতের সন্তান, তাঁর মৃত্যু নেই।