জুনপুটে মিশাইল কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির

কাঁথির উপকন্ঠে জুনপুটে মিশাইল উৎক্ষেপন কেন্দ্র স্থাপনের গোপন প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি আজ কাঁথির মহকুমা শাসক দপ্তরে ডেপুটেশান দেয়৷ আজকে এই ডেপুটেশান কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির পক্ষ্যে রুম্পা সাউ,অনুপ মাইতি ও শশাঙ্ক তপাদার৷ আজ এই প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাখার সম্পাদক সুমন্ত সী আজ এক বিবৃতিতে বলেন— “২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়ে কাঁথির উপকন্ঠে জুনপুটে মিশাইল উৎক্ষেপন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু কাঁথির শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনসাধারণ ও জুনপুট এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটেছিল৷ কিন্তু পরিকল্পনা রূপায়ন থেকে সরে আসেনি , গোপন প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল৷ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে DRDO খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই মিশাইল উৎক্ষেপন কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করতে চলেছে জুনপুটে ৷ আমরা এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আবারও আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি৷

আমরা মনে করি —আধুনিক যুদ্ধে মিসাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভারতে ইতিমধ্যেই চাঁদিপুরে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে পাঁচ ছয় মাস অন্তর একটি মিসাইল পরীক্ষা করা হয়। ফলে এই সময়সীমা কমিয়ে আনলেই তো বাড়তি মিসাইল কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন থাকে না। তাছাড়া আমেরিকা ছাড়া ইংল্যান্ড, জার্মানী, ফ্রান্স সহ বেশিরভাগ দেশেই একটি করে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র আছে। তাহলে ভারতের মতো একটি পিছিয়ে পড়া দেশে প্রতিরক্ষার কথা বলে উড়িষ্যার চাঁদিপুর, তামিলনাডুর শ্রীহরিকোটার পরও আবার জুনপুটে মিসাইল কেন্দ্র স্থাপনের সত্যিই কি প্রয়োজন আছে?

যতই প্রতিরক্ষার সেন্টিমেন্ট জাগানো হোক আসলে ভারতও আজ চেষ্টা চালাচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একটা অর্থনৈতিক ও সামরিক কর্তৃত্ব স্থাপনকারী দেশ হিসাবে নিজেকে জাহির করতে। আর এর জন্যই চাই পরমাণু বোমা, পারমাণবিক অস্ত্র- একে উৎক্ষেপণ করার ঘাঁটি। জুনপুটে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপন তাই বলাবাহুল্য, প্রতিরক্ষা নয়, পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা।

আমাদের মনে রাখতে হবে —একটা দেশ যুদ্ধে জিতবে কি হারবে তা মিসাইল ঠিক করে না,ঠিক করে মানুষ৷
সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে যুদ্ধ হয় না। পুঁজিপতি শ্রেণীর বাজার দখলের প্রয়োজনেই যুদ্ধ বাধে। তাই একটা দেশ আক্রান্ত হলে সে শেষ পর্যন্ত জিতবে কি হারবে তা মিসাইল ঠিক করেনা। ঠিক করে মানুষ। একথা পরিষ্কার যে মানুষ যদি মনে করে প্রাণ দিয়ে হলেও দেশটাকে রক্ষা করব তাহলে তারা তা করবে। কোনো দেশ যদি সত্যিই প্রতিরক্ষার জন্য ভাবিত হয় তাহলে প্রয়োজন দেশের জনসাধারণকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, শিক্ষা-সংস্কৃতি-নৈতিকতায় বলীয়ান করে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো।

মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র কোনো শ্রম নির্ভর শিল্প নয় যে এখানে সাধারণ মানুষ প্রচুর কাজ পাবে। সুতরাং কর্মসংস্থান হবে না৷আবার আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানী, ফ্রান্স যেখানেই এই রকম প্রকল্প তৈরি হয়েছে সেখানে প্রথমে বলা হয়েছে দু-তিন একর জমি অধিগ্রহণের কথা,কিন্তু ধীরে ধীরে বিস্তীর্ণ এলাকা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কারণ এই সমস্ত প্রকল্পগুলি কঠোর সামরিক গোপনীয়তার মধ্যে গড়ে তোলা হয়। সাধারণ মানুষ জানতে পারে না ওখানে কি হচ্ছে। যেখানে সামরিক গোপনীয়তা বজায় রাখা হয় সেখানে বাস্তবিকই বিশাল এলাকা অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়। আর একবার কোনো এলাকা মিলিটারীর দখলে চলে এলে সেখানে আইনের শাসনের পরিবর্তে চলে মিলিটারি শাসন। সেখানে কর্মসংস্থান তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ তার ত্রিসীমানাতেই পৌঁছতে পারে না।

যদি ভারতের উপকূল রেখা বরাবর নজর রাখা হয় তাহলে দেখা যাবে উড়িষ্যার চাঁদিপুরে এই রকম একটি মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, বালিয়াপালেও তৈরির পরিকল্পনা ছিল। আরো দক্ষিণ-পশ্চিমে মহারাষ্ট্রের উপকূল রেখা বরাবর দুটি জায়গা সরকার অধিগ্রহণের কথা ভাবছে। তামিলনাডুর কলপক্রম একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও পারমাণবিক বোমা তৈরির কেন্দ্র। এই ভাবে সমগ্র উপকূল বরাবর মালার মতন হয় একটি মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও পারণমাণবিক বিদ্যুৎ এর নাম করে পারমাণবিক বোমার মূল মশলা প্লুটোনিয়াম সংগ্রহের কেন্দ্র গড়ে উঠছে কিংবা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। সবই কিন্তু ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি। জুনপুটে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র সামগ্রিক এই যুদ্ধ পরিকল্পনার জন্য গ্রন্থিত মালার একটি অংশ।

জুনপুটে একবার মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে সমগ্র এলাকা মিলিটারীর দখলে চলে আসবে। সুতরাং গণপ্রতিরোধে যে হরিপুর থেকে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল, মিলিটারী দিয়ে জুনপুট সংলগ্ন সেই হরিপুরে আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য বিশাল এলাকা অধিগ্রহণ হবে। সুতরাং জুনপুটে মিসাইল কেন্দ্র স্থাপন হওয়া মানে হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিশ্চিতকরা। আমরা এই সামগ্রিক পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করছি এবং জুনপুট সহ কাঁথিবাসীর জীবন জীবিকা রক্ষার্থে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি৷”

পাশাপাশি দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা জানানো হয়েছে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির পক্ষ থেকে

Flamingo Media Share