News Caff: এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে, মানে বিমান সংক্রান্ত কর্মক্ষেত্রে নারী অর্থে এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রু ধরা হত। এয়ার হোস্টেস হওয়া ছাড়া নারীরা যে এইক্ষেত্রে আর কোনো পেশায় যুক্ত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, ভারতবর্ষে সেকথা কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না। ১৯৫৯ সালে প্রথম এই ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স হাসিল করেন বাঙালি মেয়ে দুর্বা ব্যানার্জী। ১৯৬৬ সাল থেকে দুর্বা এয়ার ইন্ডিয়া পাইলট হিসাবে কাজে যোগ দেন। ডোমেস্টিক এবং ইন্টারন্যাশানাল সেক্টরে ২২ বছর সাফল্যের সঙ্গে বিমান চালিয়ে ‘৮৮ সালে দুর্বা অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে দুর্বা ব্যানার্জীর সাফল্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বহুমেয়ে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স হাসিল করেছেন এবং দেশী বিদেশী বিভিন্ন জেট লাইনারে তাঁরা সাফল্যের সঙ্গে পাইলট হিসাবে কাজ করছেন। প্রচুর বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এসে, অবশেষে ভারতের কমার্শিয়াল পাইলটদের মধ্যে আজ ১২% স্থান মেয়েরাই দখল করেছেন এবং এই সংখ্যাটা ক্রমশই বাড়ছে।
তবে কমার্শিয়াল পাইলট হিসাবে মেয়েরা তাঁদের যোগ্যতার প্রমান দিলেও, ভারতীয় মেয়েরা কোনোদিন জেট ফাইটার চালাতে পারবেন, অতি বড় আশাবাদীও কিছু বছর আগে এই কথাটা ভাবতে পারতেন না। ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কিছু বছর আগেও মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাপ্লাই কোর ইত্যাদির মত কিছু সিলেক্টেড ট্রেন্ড ছাড়া মেয়েদের প্রবেশ অধিকার ছিলো না। ২০০৯ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রথম সিদ্ধান্ত নেয় যে, যোগ্য ও সাহসী মেয়েদের জন্য যুদ্ধ বিমান চালানোর সুযোগ উন্মুক্ত করা হবে। এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বললেও কম বলা হয়, কারন কম্ব্যাট ফাইটার চালানো’র চ্যালেঞ্জের সাথে কমার্শিয়াল জেট চালানোর কোনো তুলনাই চলে না। যদিও বিশ্বে অনেক দেশে নারীরা জেট ফাইটার সাফল্যের সঙ্গে চালাচ্ছেন, কিন্তু ভারতের মত দেশে এটা করে দেখানো যথেষ্ট মুশকিলের বিষয় ছিলো। প্রথম কয়েক বছর বহু মেয়েই NDA (National Defence Academy) লিখিত, মৌখিক ও শারিরীক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও কম্ব্যাট ফাইটার হওয়ার আবশ্যকীয় টেষ্ট PABT তে সফল হতে পারেন নি। অবশেষে ‘১৪ সালে NDA পরীক্ষায় তিনজন মেয়ে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে পাইলট প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন।
মেয়েদের এই সাফল্যকে নতমস্তকে কুর্নিশ জানানোর সময় এসেছে। ভারতীয় সমাজে বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ মেয়েরা কম্ব্যাট ফাইটার পাইলট হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়ে প্রমান করে দিয়েছেন, এতদিন তাঁদের জেট ফাইটার পাইলট হওয়ার ক্ষেত্রে এয়ারফোর্স যে নিষেধাজ্ঞা জারী রেখেছিল, তা নেহাতই নির্বুদ্ধিতা প্রসূত ছিল। নিছক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হওয়াই নয়, যে সব কাজকে কিছুদিন আগেও একচেটিয়া পুরুষের কাজ বলে মনে করা হত, আজ সেইসব কাজে ভারতীয় মেয়েরা তাঁদের যোগ্যতা প্রমান করে দিয়েছেন। পুরুষ যে কোন অবস্থাতেই স্যুপেরিয়র জেন্ডার নয়, বরং বেশ কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় ইনফেরিয়র, তা আজ প্রমাণিত হয়েছে। এখন মূর্খ, আত্মগর্বী পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহক সম্প্রদায়, যত তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারবে ততই মঙ্গল।